হোম ব্লগ বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম ২০২৫: সব বাজেটের জন্য

বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম ২০২৫: সব বাজেটের জন্য

ফ্যান ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম ২০২৫: সব বাজেটের জন্য

আপনি যদি বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম খুঁজে দেখেন, বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন সাইটে লম্বা প্রোডাক্ট গ্রিডসহ পেজই বেশি পাবেন। দেখার জন্য এগুলো বেশ ভাল, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সেগুলো ততটা সহায়ক নয়।

বাংলাদেশে বেশিরভাগ টেবিল ফ্যানের দাম সাধারণত ১,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। প্রিমিয়াম বা আধুনিক সব ফিচারযুক্ত মডেলের দাম ৭,০০০ টাকার উপরেও যেতে পারে। ব্লেডের আকার, মোটরের মান, নয়েজ কন্ট্রোল, আর রিমোট, টাইমার বা রিচার্জেবল ব্যাটারির মতো বাড়তি ফিচারের সাথে দাম ওঠানামা করে।

আজকের গাইডটি প্রথমে দামের একটি পরিষ্কার ধারণা দেবে, এরপর আপনার ঘরের আকার, নয়েজের পরিমাণ এবং দৈনিক খরচ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে কীভাবে আপনার ফ্যানটি নির্বাচন করবেন তা দেখাবে। আপনি চাইলে দুই মিনিটে এই পুরো লিখায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, আবার চাইলে পুরোটাই বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।

তাহলে আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো টেবিল ফ্যানের দাম নির্ধারণ করে

আপনি বেসিক ফাংশনসহ টেবিল ফ্যান নিন বা রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান নিন, এটা মাথায় রাখুন যে দামটা নির্ধারিত হয় মূলত ৫ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে-

1. ব্লেডের আকার ও এয়ারফ্লো: বড় ব্লেড এবং বেশি RPM মানেই বেশী বাতাস এবং দামও তুলনামূলক বেশী।

2. মোটরের গুণমান: কপার উইন্ডিং অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় তাপ সামলায় ভালো এবং সাধারণত বেশি টেকসই।

3. নয়েজ কন্ট্রোল: ভালো বিয়ারিং, সঠিক মাপের ব্যালেন্সড ব্লেড এবং ফ্যানের শক্তপোক্ত গঠন খরচ বাড়ায়, তবে আপনার কানকে নয়েজের হাত থেকে বাঁচায়।

4. ফিচার: অসিলেশন এখন সব ফ্যানেই একটি স্ট্যান্ডার্ড ফিচার। টাইমার, রিমোট এবং ডিসপ্লে এর মত ফিচারও দাম বাড়ায়। আর সাথে রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকলে খরচ আরও বাড়ে।

5. ওয়ারেন্টি ও আফটার সেলস: ভাল সার্ভিস নেটওয়ার্ক এবং দুই বছরের (বা তার বেশী) ওয়ারেন্টি সাপোর্ট থাকলেও তার প্রভাব ফ্যানের দামে কিছুটা পড়ে।

সাইজ এবং ফিচার অনুযায়ী টেবিল ফ্যানের দাম

এখন আমরা বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দামের একটি আনুমানিক চিত্র টেবিল আকারে দেখাব। এতে আপনার বাজেট কেমন হওয়া উচিত তা বুঝতে সুবিধা হবে।

ফ্যানের আকার বা ধরন ওয়াট বাতাসের পরিমাণ (আনুমানিক) শব্দের পরিমাণ মূল ফিচার ওয়ারেন্টি (সাধারণত) সাধারণ মূল্য (টাকা) যাদের জন্য উপযোগী
১২ ইঞ্চি কমপ্যাক্ট ৩০–৪০ ওয়াট কাছাকাছি দূরত্বে হালকা বাতাস সর্বোচ্চ স্পিডে শব্দ লক্ষ্যণীয় টিল্ট, অপসিলেশন, বেসিক কন্ট্রোল ১ বছর ১,৫০০–২,৫০০ স্টুডেন্ট ডেস্ক ও একক ব্যবহারকারী
১৪ ইঞ্চি মিডিয়াম সাইজ ৪০–৫০ ওয়াট ভালো বাতাস (ছোট ঘরের জন্য) মাঝারি স্পিডে কম শব্দ মজবুত গ্রিল, মাল্টি স্পিড ১–২ বছর ২,২০০–৪,০০০ বেডরুম ও ছোট অফিস
১৬ ইঞ্চি হাই এয়ার ফ্লো ৪৫–৬০ ওয়াট জোরালো বাতাস (বড় ঘরের জন্য) ব্লেডের শব্দ কম; ভালো ব্যালেন্স চওড়া বেস, শক্ত বডি ১–২ বছর ৩,৫০০–৬,০০০ লিভিং রুম ও ওপেন স্পেস
রিমোট বা টাচস্ক্রিন মডেল ৪৫–৬০ ওয়াট সাইলেন্ট অপারেশন-ফোকাসড কম শব্দের জন্য টিউনড রিমোট, টাইমার, স্লিপ মোড ১–২ বছর ৩,০০০–৭,০০০ রাতে ব্যবহার ও বহুমুখী ব্যবহার
রিচার্জেবল (AC–DC) ৬০–৮০ ওয়াট মোড অনুযায়ী বাতাসের মাত্রা বদলে যায় চার্জিংয়ের সময় হালকা শব্দ বিল্ট-ইন ব্যাটারি, চার্জিং ইন্ডিকেটর ১ বছর ৪,০০০–৮,০০০ লোডশেডিং/ব্যাকআপ প্রয়োজন যেখানে

ল্যাক্সফো এর জনপ্রিয় সব টেবিল ফ্যানের তালিকা

এখন আমরা ল্যাক্সফো এর কিছু পরীক্ষিত মডেল দেখাব, যেগুলো পোর্টেবিলিটি, ব্যাকআপ এবং দৈনন্দিন আরামের চাহিদা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পূরণ করে থাকে। সব মডেলেই ডেডিকেটেড ব্যাটারি আছে, ফলে বিদ্যুৎ না থাকলেও তারা বাতাস দিতে সক্ষম।

৬ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান

 LED Tube Lights

এই মডেলটি একদম ছোট এবং বহন করা একদম সহজ। স্টাডি ডেস্ক, ভ্রমণ এবং স্বল্প সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে এগুলো বেশ উপযোগী। ২০০০ mAh লিড অ্যাসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা হলেও এই ফ্যান সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা ব্যাকআপ দিতে সক্ষম।

মূল বৈশিষ্ট্য:

  • ব্যাটারি ২০০০ mAh (লিড অ্যাসিড)
  • ফ্যানে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা ব্যাকাপ, নাইট ল্যাম্পে ব্যাকাপ সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা
  • তিনটি স্পিড মোড
  • এসি ইনপুট ১১০ থেকে ২৪০ ভোল্ট, ৫০ বা ৬০ হার্জ
  • অ্যাডাপ্টার বা সোলার প্যানেলে চার্জ করা যায়
  • মূল্য ১,৯৫০ টাকা
  • পার্সোনাল কুলিং এবং জরুরি আলোর জন্য সেরা।

১৪ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান

LED Flood Light

এই মডেলটিতে তুলনামূলক বড় ব্লেড ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি দীর্ঘ ব্যাটারী ব্যাকআপ দিতে সক্ষম যা বেডরুম ও ফ্যামিলি স্পেসের জন্য ভালো। ৬ ইঞ্চি মডেলের তুলনায় এর ব্যাটারিও অনেক বড়। তাই এটি শুধু ডেস্ক ফ্যান নয়, লোডশেডিংয়ের সময়ও আপনার দুর্দান্ত সমাধান হতে পারে।

মূল বৈশিষ্ট্য:

  • ব্যাটারি ৭০০০ mAh
  • ব্যাকআপ হাই স্পিডে ৫ ঘণ্টা, মিডিয়াম ৭ ঘণ্টা, লো ৯ ঘণ্টা
  • স্বয়ংক্রিয় অসিলেশন এবং তিন ধাপের স্পিড সেটিং
  • ইউএসবি মোবাইল চার্জিং এবং উজ্জ্বল এলইডি নাইট লাইট
  • ওভারচার্জ ও ওভার ডিসচার্জ প্রটেকশন
  • ডিসি ইনপুটের মাধ্যমে সোলার প্যানেল ব্যবহার উপযোগী
  • মূল্য ৫,৫০০ টাকা

ডিসপ্লেসহ ১৪ ইঞ্চি এসি-ডিসি রিচার্জেবল ফ্যান

Emergency AC/DC Light

এই ফ্যানটি ডুয়াল (এস/ডিসি) পাওয়ারে চলে এবং এর ডিসপ্লে আরও আরামে আপনাকে ফ্যানটিকে নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা দেয়। ডিসপ্লেতে ফ্যানের স্পিড ও বর্তমান ব্যাটারি চার্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখা যায়। ৭০০০ mAh ব্যাটারি থাকায় লো স্পিডে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ আশা করা যায়।

মূল বৈশিষ্ট্য:

  • এসি ও ডিসি উভয়ে কাজ করে
  • ব্যাটারি ৬ ভোল্ট ৭০০০ mAh
  • স্পিড অনুযায়ী ৫ থেকে ১২ ঘণ্টা ব্যাকআপ
  • হাই স্পিড মোটর প্রায় ১৪০০ RPM
  • প্রতি মিনিটে প্রায় ২৫ ঘনমিটার এয়ার ডেলিভারি
  • নয় ধাপের স্পিড কন্ট্রোল, ডিজিটাল ব্যাটারি ও স্পিড ডিসপ্লে
  • এলইডি লাইট এবং মোবাইল চার্জিং সাপোর্ট
  • সাধারণত চার্জ হতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগে
  • মূল্য ৬,৫০০ টাকা
  • যেসব বাড়িতে ঘন ঘন লোডশেডিং হয় এবং নিখুঁতভাবে স্পিড নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, তাদের জন্য উপযুক্ত।

ল্যাক্সফো টেবিল ফ্যানগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র

মডেল ফ্যানের আকার ব্যাটারি আনুমানিক ব্যাকআপ উল্লেখযোগ্য ফিচার মুদ্রিত মূল্য
৬ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান ৬ ইঞ্চি ২০০০ mAh ফ্যান সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা, ল্যাম্প ২০ ঘণ্টা তিন ধাপের স্পিড, এসি ইনপুট, সোলার চার্জ অপশন ১,৬৫০ টাকা
১৪ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান ১৪ ইঞ্চি ৭০০০ mAh স্পিড ডিপেন্ড ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা অটো অপসিলেশন, ইউএসবি চার্জ, এলইডি নাইট লাইট, সোলার কমপ্যাটিবল ৩,৬৫০ টাকা
ডেস্কটপ ১৪ ইঞ্চি এসি–ডিসি ১৪ ইঞ্চি ৯০০০ mAh স্পিড ডিপেন্ড ৫ থেকে ১২ ঘণ্টা এসি–ডিসি মোড, নয় ধাপে স্পিড কন্ট্রোল, ডিজিটাল ডিসপ্লে, এলইডি লাইট ৫,৫০০ টাকা

বাজেট অনুযায়ী সেরা মানের ফ্যান

সাধারণত আপনার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী আপনি টেবিল ফ্যানের বাজেট ধরতে পারেন। বাস্তবে দামের রেঞ্জগুলো সাধারণত কেমন হয় তার একটি ধারণা এখানে দেয়া হলো-

২,০০০ টাকার নিচে

স্টুডেন্ট ডেস্ক বা একক ব্যবহারকারীর জন্য এই রেঞ্জের ফ্যানগুলো ভালো। সাধারণত ১২ ইঞ্চি ব্লেড, তিন ধাপের স্পিড কন্ট্রোল এবং বেসিক অসইলেশন থাকে। নামী দামী ব্রান্ডের কাছ থেকে কিনলে সেগুলো বিল্ড কোয়ালিটি ভাল পাবেন এবং কেনার সময় দেখে নেবেন যে গ্রিল এবং বেস সহজেই নড়াচড়া করছে কিনা বা আওয়াজ করছে কিনা। তবে এই দামে একদম ফিসফিসে নীরবতা আশা করবেন না।

২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা

বেশিরভাগ ঘরের জন্য এটি আদর্শ বাজেট। এই বাজেটে ১৪ ইঞ্চি এবং অনেক ১৬ ইঞ্চি অপশন পাবেন, মজবুত বেস এবং মসৃণ অসিলেশনসহ। বক্সে কপার মোটরের উল্লেখ আছে কি না দেখুন, গ্রিলে পরিষ্কার ফিনিশ আছে কি না দেখুন, আর অন্তত এক বছরের ওয়ারেন্টি আছে কি না দেখে নিন।

৪,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা

এখন আপনি একটি ভাল বাজেটে আছেন। পুরো ১৬ ইঞ্চি সাইজ, উন্নত বিয়ারিং, আর মাঝারি স্পিডে কম শব্দ করে, এমন সব মডেল এই বাজেটে পাবেন। অনেক ইউনিটে সাধারণ টাইমারও যুক্ত থাকে। পার্থক্যটা টের পাবেন এর স্থিতিশীলতায় এবং রাতে যখন এটি এক প্রকার নিঃশব্দেই আপনাকে বাতাস প্রদান করবে।

৬,০০০ টাকার বেশি

এখন আপনি একেবারে লো নয়েজ, প্রিমিয়াম প্লাস্টিক, রিমোট এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো ভালো ওয়ারেন্টির জন্য খরচ করছেন। লোডশেডিং আপনাকে যদি হরহামেশাই বিরক্ত করে, এই রেঞ্জেই রিচার্জেবল এবং এসি-ডিসি হাইব্রিড মডেলগুলো যাবেন। আরামের পাশাপাশি এই রেঞ্জের ফ্যানগুলো আপনার হতে পারে আপনার লোডশেডিং এর কাঙ্খিত ব্যাকাপ।


সঠিক টেবিল ফ্যান কীভাবে বাছাই করবেন

ঘরের জন্য সঠিক টেবিল ফ্যান বেছে নিতে কয়েকটি মৌলিক বিষয় দেখা দরকার। বিবেচনায় রাখতে পারেন এই বিষয়গুলো:

  • ঘর ও দূরত্ব: ১২ ইঞ্চি মডেল ১ থেকে ২ মিটারের মধ্যে ভালো কাজ করে। ছোট ঘর বা দুইজনের জন্য ১৪ বা ১৬ ইঞ্চি মডেল বেশী ভাল।
  • মোটরের উপাদান: কপার উইন্ডিং অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় তাপ সামলায় ভালো এবং সাধারণত বেশি টেকসই। দিনে অনেক ঘণ্টা চালাতে হলে কপার মোটরে একটু বেশি খরচ করাও সার্থক।
  • বিদ্যুৎ খরচ ও কর্মদক্ষতা: কম ওয়াটে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় সত্য, তবে এয়ারফ্লো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্লেড সাইজ এবং RPM এর সঙ্গে ওয়াটের একটা ভারসাম্য বজায় রাখুন, যাতে বাতাস দুর্বল না হয়ে পড়ে।
  • নয়েজ ও বিল্ড কোয়ালিটি: সম্ভব হলে ডেমো দেখুন। ফুল স্পিডে ফ্যান কাঁপছে কি না দেখুন, বিয়ারিংয়ের শব্দ কেমন তা শুনুন, গ্রিলের ফিনিশ পরীক্ষা করুন।
  • গুরুত্বপূর্ণ ফিচার: অসিলেশন মেকানিজম, টিল্ট, টাইমার, রিমোট, শিশুদের জন্য নিরাপদ গ্রিল স্পেসিং, এবং মসৃণ মেঝেতে সহজে না সরার মতো বেস আছে কি না যাচাই করুন।

টেবিল ফ্যানের মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ও খরচ

টেবিল ফ্যানের মাসিক খরচ ঠিক করে মূলত দুইটি সংখ্যা-

1. ফ্যানের ওয়াট রেটিং

2. আপনার প্রতি kWh ট্যারিফ (টাকায়)

মাসিক বিদ্যুৎ খরচ হিসাবের এক লাইনের সূত্র হচ্ছে:

মাসিক খরচ (টাকায়) = (ওয়াট ÷ ১০০০) × দিনে ব্যবহার ঘন্টা × ৩০ × ট্যারিফ

একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাক-

ধরা যাক,

একটি ৪৫ ওয়াটের ফ্যান প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা চালানো হয় এবং ট্যারিফ ৮ টাকা প্রতি kWh

এখন সূত্রে মানগুলো বসানো যাক-

মাসিক খরচ (টাকায়) = (৪৫ ÷ ১০০০) × ৮ × ৩০ × ৮ = ৮৬.৪ টাকা (প্রতি মাসে)

নিচে বিভিন্ন ওয়াটের টেবিল ফ্যানের জন্য আনুমানিক মাসিক খরচের একটি টেবিল দেওয়া হলো-

ফ্যানের ওয়াটেজ ৪ ঘণ্টা/দিন ৮ ঘণ্টা/দিন ১২ ঘণ্টা/দিন
৩৫ ওয়াট ৩৬.৬ টাকা ৭৩.২ টাকা ১০৯.৮ টাকা
৪৫ ওয়াট ৪৬.২ টাকা ৯২.৪ টাকা ১৩৮.৬ টাকা
৫৫ ওয়াট ৫২.৮ টাকা ১০৫.৬ টাকা ১৫৮.৪ টাকা

আপনার ট্যারিফ ভিন্ন হলে kWh মানকে আপনার উপর প্রযোজ্য kWh রেট দিয়ে গুণ করুন।

খরচ কমানোর কিছু নোট ও টিপস

  • কম ওয়াট বিল কমাতে সাহায্য করে, তবে বাতাস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে ওয়াটেজে ঘরটা স্বাচ্ছন্দ্যে ঠান্ডা থাকে সেটিই বেছে নিন।
  • মাঝারি স্পিড সাধারণত এয়ারফ্লো আর ওয়াটের মধ্যে একটা ভারসাম্যপূর্ণ জায়গা।
  • ব্লেড ও গ্রিল নিয়মিত পরিষ্কার করুন। জমে থাকা ধুলো বাতাসের পরিমাণ কমায় এবং আপনাকে বেশি স্পিডে ফ্যানটি চালাতে বাধ্য করে।
  • ঘর মোছার প্রয়োজন না হলে অসিলেশন বন্ধ রাখুন।
  • রিচার্জেবল ফ্যান চার্জিংয়ের সময়ও বিদ্যুৎ টানে এবং এই শময়ে কিছু বিদ্যুৎ লসও হয়ে যায়। তাই মোটরে উল্লেখিত ওয়াটের চেয়ে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ শতাংশ শক্তি বেশি লাগতে পারে বলে ধরে রাখতে পারেন।

যদি বিদ্যুৎ খরচ কমানোর একটি বিকল্প সমাধান চান, রিচার্জেবল ফ্যান দিয়ে এনার্জি বিল সাশ্রয় নিয়ে আমাদের আলাদা আলোচনাটি দেখতে পারেন।

সিজন অনুযায়ী ফ্যানের দাম ও অফার

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম পড়লে সব ধরনের ফ্যানের চাহিদা বেশ বাড়ে, টেবিল ফ্যানও এর বাইরে নয়। সেই সঙ্গে দামেরও বৃদ্ধি দেখা যায়।

অন্যদিকে, শীতে চাহিদা না থাকায় দাম কমে। টাকা বাঁচাতে শীতে কিনতে পারেন, তবে শীতকালে খুচরা বিক্রেতারা সাধারণত টেবিল ফ্যানের স্টক সীমিত রাখে (কারণ চাহিদা থাকে না)।

নিচে টেবিল দেওয়া হলো, কোন মাসগুলোতে টেবিল ফ্যান কেনা কম সুবিধাজনক আর কোন সময়গুলোতে কেনার চেষ্টা করা যেতে পারে, তা বোঝার জন্য এটি ভাল কাজ করবে।

বাংলাদেশে সময়কাল সাধারণ দামের পরিবর্তন কারণ যা করা উচিত
ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল দাম বাড়ে গরম বাড়ে এবং গ্রীষ্মের আগে চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায় পারলে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই কিনুন
মে থেকে জুন জনপ্রিয় মডেলে বেশি দাম/স্টকআউট ঈদ/ছুটি মৌসুম, লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা, নতুন শিপমেন্ট মাঝারি অপশন নিন বা গরম কমলে আপগ্রেড করুন
জুলাই থেকে আগস্ট মিক্স অবস্থা—দাম কিছুটা কম, রিচার্জেবল মডেল মোটামুটি মৌসুম স্থিতিশীল, কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিঘ্ন কেনার আগে ১–২ সপ্তাহ দাম পর্যবেক্ষণ করুন
সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর দাম স্থিতিশীল, দরকষাকষির সুযোগ বেশি চাহিদা কমে ও নতুন স্টক আসে স্বল্প বাজেটে কেনার ভালো সময়; পুরনো মডেল ক্লিয়ারেন্সে পেতে পারেন
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি বছরের সেরা ডিল সবচেয়ে বেশি অফ সিজন ও বছরশেষের সেল সম্পূর্ণ ওয়ারেন্টিসহ আগের বছরের মডেলও টার্গেট করুন

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

মৌসুম, আবহাওয়া এবং আরও কিছু কারণে বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের দাম ওঠানামা করে। বেশিরভাগ ক্রেতা ২,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে সন্তুষ্ট থাকেন। শান্ত মোটর, উন্নত বিয়ারিং এবং টাইমারের মতো বাড়তি ফিচার দামের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করুন আপনার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে।

আগে আপনার অগ্রাধিকার ঠিক করুন, অনলাইনে কিছু রিসার্চ করুন, এবং পরিচিত সব ব্র্যান্ডের মডেলগুলো নিয়ে একটি লিস্ট বানান। মাঝারি স্পিডে শব্দ কেমন দেখুন, অসিলেশন স্থির কি না দেখুন, আর দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য কপার উইন্ডিংকে অগ্রাধিকার দিন। দাম সাধারণত গ্রীষ্মের আগে চূড়ায় উঠে, গরম কমলে নেমে আসে। তাই আগেভাগে বা অফ সিজনে কিনলে লাভ হয়। এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেশি হলে রিচার্জেবল বা এসি-ডিসি মডেল নেয়াটা সবচেয়ে ভাল।

সর্বোপরি, স্পেসিফিকেশন দেখুন, আপনার জায়গার উপযোগী সাইজ নিন, এবং ওয়ারেন্টিসহ ক্রয় করুন আপনার পছন্দের টেবিল ফ্যানটি।

প্রশ্নোত্তর

বাংলাদেশে টেবিল ফ্যানের গড় দাম কত?

বেশিরভাগ ক্রেতা ২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকার মধ্যে খরচ করেন। এন্ট্রি মডেল প্রায় ১,৫০০ টাকার কাছ থেকে শুরু হয়। ফিচার সমৃদ্ধ বা রিচার্জেবল ইউনিট ৬,০০০ টাকার বেশি হতে পারে।

৩,০০০ টাকার মধ্যে কোন টেবিল ফ্যানটি ভালো?

মজবুত ১২ বা ১৪ ইঞ্চি মডেল নিন যাতে কপার মোটর, মসৃণ অসিলেশন এবং অন্তত ১ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। দুর্বল গ্রিল ও বেস সহজেই কাঁপে, এমন মডেল এড়িয়ে চলুন।

আমার জায়গার জন্য কোন সাইজ নেব?

একজনের ডেস্কের জন্য ১২ ইঞ্চি। ছোট বেডরুমের জন্য ১৪ ইঞ্চি। বড় ঘর বা শেয়ারড স্পেসের জন্য ১৬ ইঞ্চি যাতে এয়ারফ্লো বেশি হয়।

টেবিল ফ্যান কত ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে?

সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ ওয়াট। বড় ব্লেড ও বেশি RPM হলে খরচ বাড়ে। এমন কম ওয়াট বেছে নিন যা জায়গাকে স্বচ্ছন্দে ঠান্ডা রাখে।

বেশী দামে কপার মোটর নেয়াটা কি যুক্তিসঙ্গত?

হ্যাঁ, যদি দিনে অনেক ঘণ্টা চালান। কপার তাপ সামলায় ভালো এবং সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় বেশি টেকসই।

রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান কেনা কি ভাল সিদ্ধান্ত?

বিদ্যুৎ বিভ্রাট সাধারণ হলে, হ্যাঁ অবশ্যই। ব্যাটারির ক্ষমতা, লো ও মিড স্পিডে এর ব্যাকআপ এবং চার্জিং চলাকালীন চলতে পারে কি না, এসব কিছু ব্যাপার দেখে কিনুন।

কোন ফিচারগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

মসৃণ অসিলেশন, ভাল টিল্ট মেকানিজম, মাঝারি স্পিডে কম শব্দ, টাইমার এবং শক্ত একটি বেস। বেডরুম ও প্রবীণদের জন্য রিমোটের ব্যবস্থা থাকলে সেটি আরও সুবিধাজনক।

দোকানে শব্দ ও এয়ারফ্লো কীভাবে পরীক্ষা করব?

দোকানীর কাছ থেকে ফ্যানটির একটা ডেমো দেখে নিন। মাঝারি স্পিডে খটখট বা ঘড়ঘড় শব্দ আসছে কি না এবং বেস কাঁপে কি না দেখুন। শক্তিশালী এয়ারফ্লো হলে দুই মিটার দূরেও স্থিরভাবে টের পাওয়া যায়।

একটি টেবিল ফ্যান কতদিন টিকে?

ভাল যত্নে সাধারণত ২ থেকে ৫ বছর টিকে। ভালো বিয়ারিং ও উন্নত গঠনের হলে আরও বেশ কয়েক বছর চলতে পারে।

কেমন ওয়ারেন্টি দেখা উচিত?

১ বছর স্ট্যান্ডার্ড। ২ বছর হলে বাড়তি সুবিধা। বক্স, স্টিকার ও ইনভয়েসে মডেল কোড মিলিয়ে নিন এবং সিলযুক্ত ওয়ারেন্টি কার্ড নিন। ল্যাক্সফো থেকে যে কোনো ইউনিট নিলে আমরা ১৮ মাসের ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকি।

কখন কেনা সবচেয়ে ভালো?

গ্রীষ্মের আগে দাম চূড়ায় থাকে। বর্ষার শেষ দিকে বা শীতে, আর উৎসব মৌসুমের বিভিন্ন অফারে সাধারণত সাশ্রয় করা যায়।

সম্পর্কিত ব্লগ

সঠিক ফ্যান ক্যাপাসিটর কীভাবে কিনবেন: একটি পরিপূর্ণ গাইড

সঠিক ফ্যান ক্যাপাসিটর কীভাবে কিনবেন: একটি পরিপূর্ণ গাইড

২৮ আগস্ট, ২০২৫

আরও পড়ুন
চার্জার ফ্যান কেন সিলিং ফ্যানের থেকে ভালো? একটি বিশ্লেষনধর্মী গাইড

চার্জার ফ্যান কেন সিলিং ফ্যানের থেকে ভালো? একটি বিশ্লেষনধর্মী গাইড

২৭ জুলাই, ২০২৫

আরও পড়ুন
কিভাবে রিচার্জেবল ফ্যান আপনার বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করবে

কিভাবে রিচার্জেবল ফ্যান আপনার বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করবে

২২ জুলাই, ২০২৫

আরও পড়ুন
গরমেও পাবেন স্বস্তির বাতাস: জানুন রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের উপকারিতা

গরমেও পাবেন স্বস্তির বাতাস: জানুন রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের উপকারিতা

১৪ নভেম্বর, ২০২৪

আরও পড়ুন
গ্রীষ্মে আরামের সঙ্গী: রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান

গ্রীষ্মে আরামের সঙ্গী: রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আরও পড়ুন