ফ্যান ২২ জুলাই, ২০২৫
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিল দিন দিন বেড়েই চলেছে, আর সাথে আছে লোডশেডিং-এর সমস্যা। ফলে মানুষ এমন সমাধান খুঁজছেন যা বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী ও সাশ্রয়ী মূল্যের। এমতাবস্থায় রিচার্জেবল ফ্যান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপনি শহরের ফ্ল্যাটে থাকুন বা গ্রামের বাড়িতে, রিচার্জেবল ফ্যান আপনার মাসিক বিদ্যুৎ বিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
আজকের গাইডে আমরা দেখবো কীভাবে রিচার্জেবল ফ্যান আপনার বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে রিচার্জেবল ফ্যানের দাম, সেরা রিচার্জেবল ফ্যান ব্র্যান্ড ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়েও আলোচনা করবো।
রিচার্জেবল ফ্যান হলো এক ধরনের পোর্টেবল ফ্যান যা সাধারণত ব্যাটারিতে চলে। এটি মূলত সেইসব অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত যেখানে সরাসরি বিদ্যুতের সংযোগ নেই অথবা আপনার যেখানে আপনার প্রিয় ফ্যানটি সাথে করে নিয়ে ভ্রমণ করাটা বরং বেশী প্রয়োজন। এই ধরনের ফ্যান বিভিন্ন আকার ও আকৃতিতে পাওয়া যায়, যা ঘরে, অফিসে, বাইরে বা ভ্রমণের সময় ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। আর এগুলো রিচার্জেবল ব্যাটারিতে চলে, যেগুলো সাধারণ বৈদ্যুতিক সকেট বা সোলার প্যানেল ব্যবহার করেই সহজে পুনরায় চার্জ করে নেয়া যায়।
রিচার্জেবল ফ্যানের প্রধান সুবিধাগুলোর একটি হলো এর বহনযোগ্যতা। সাধারণ ফ্যানগুলোর মতো এগুলোকে বিদ্যুতের সংযোগে রাখার প্রয়োজন পড়ে না, তাই এগুলো ক্যাম্পিং এবং পিকনিকের মতো বাইরের অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ। এছাড়া এগুলোর প্রায় সবগুলোতেই ফ্যানের স্পিড বাড়ানো কমানো এবং সয়ংক্রিয়ভাবে ডানে বায়ে ঘুরে ঠান্ডা বাতাস ছড়ানোর মতো কিছু ফিচার থাকে, যা আপনাকে নানা রকমের কুলিং অপশন দেয়। যেহেতু এগুলোর ব্যাটারি রিচার্জ করে বারবার ব্যবহার করা যায়, তাই ডিসপোজেবল ব্যাটারি চালিত ফ্যানের তুলনায় এগুলো পরিবেশের জন্যও বেশী উপযোগী।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি ঠান্ডা থাকার পাশাপাশি বিদ্যুতের বিলও কমাতে পারেন। সাধারণ ফ্যান বা এসির তুলনায় এই ফ্যানগুলো অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যা কিনা পরিবেশবান্ধবও বটে।
রিচার্জেবল ফ্যান সাধারণত খুব কম ওয়াটে চলার জন্য ডিজাইন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে একটি সাধারণ সিলিং ফ্যান ঘণ্টায় ৭০–৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে, সেখানে একটি রিচার্জেবল ফ্যান খরচ করে মাত্র ১০–২৫ ওয়াট।
একবার চার্জ হলে এই ফ্যানগুলো ব্যবহারের সময় আর বিদ্যুৎ খরচ করে না। আপনি শুধু চার্জ করার সময়টুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। অফ-পিক আওয়ার বা সোলার প্যানেল থেকে চার্জ করলে খরচ আরও কমে।
বাংলাদেশে লোডশেডিং একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেকেই ব্যয়বহুল জেনারেটর বা ইনভার্টারে নির্ভর করেন। কিন্তু রিচার্জেবল ফ্যান এসবের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী বিকল্প।
সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে এই ফ্যানগুলো কয়েক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, ফলে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমাধান হয়ে ওঠে।
রিজার্জেবল ফ্যানগুলোতে সবসময়ই সাধারণ ফ্যানগুলোর তুলনায় বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। এগুলো আকারে ছোট, হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় যেকোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণ ফ্যানের তুলনায় আওয়াজ বেশ কম হবার কারণে এগুলো নার্সারি, বেডরুম এবং অন্যান্য শান্ত পরিবেশে ব্যবহারের জন্যও একদম উপযুক্ত। এছাড়া, কম বিদ্যুৎ খরচ এবং উচ্চ শক্তি-সাশ্রয়ী হওয়ায় এগুলো ঐতিহ্যগত ফ্যানের তুলনায় চালানোর খরচ অনেক কম, পাশাপাশি পরিবেশবান্ধবও বটে।
ফ্যানের ধরন | বিদ্যুৎ খরচ | মাসিক খরচ (সাধারণ ব্যবহারে) | প্রাথমিক বিনিয়োগ |
---|---|---|---|
সিলিং ফ্যান | ৭০–৮০ ওয়াট/ঘন্টা | মোটামুটি | কম |
টেবিল ফ্যান | ৫০–৬০ ওয়াট/ঘন্টা | মোটামুটি | মোটামুটি |
এয়ার কন্ডিশনার (এসি) | ৮০০–২০০০ ওয়াট/ঘন্টা | অনেক বেশী | অনেক বেশী |
রিচার্জেবল ফ্যান | ১০–২৫ ওয়াট/ঘন্টা | নামমাত্র | মোটামুটি |
অর্থাৎ যেমনটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন, ভাল মানের একটি রিজার্জেবল ফ্যান নেয়া মানেই আপনার বিনিয়োগ এবং খরচের মাঝে একটি সুন্দর সমন্বয়।
এনার্জি-সেভিং পণ্য বাছাই করার সময় মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিচে LAXFO Electronics-এর কিছু রিচার্জেবল ফ্যানের দাম সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
মডেল | ব্যাটারি ক্যাপাসিটি | ফিচারসমূহ | মূল্য (টাকা) |
---|---|---|---|
৬ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান | ২০০০mAh (লেড-অ্যাসিড) | USB চালিত, সহজে বহনযোগ্য | ১৯৫০ |
১৪ ইঞ্চি রিচার্জেবল ফ্যান | ৭০০০mAh | ওভারচার্জ প্রটেকশন, ওভার-ডিসচার্জ প্রটেকশন | ৫৫০০ |
১৬ ইঞ্চি AC/DC রিচার্জেবল ফ্যান | ১২V ৪৫০০mAh (ডুয়াল ব্যাটারি) | এলইডি লাইট ও মোবাইল চার্জ করার সুবিধা | ৬৯৫০ |
১৪ ইঞ্চি AC/DC রিচার্জেবল ফ্যান (ডিসপ্লেসহ) | ৬V ৭০০০mAh | ৯ মোড স্পিড, ৫ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ | ৬৫০০ |
এছাড়াও বাংলাদেশে এখন ভাল মানের কিছু সেরা ব্রান্ডের রিচার্জেবল ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে, এবং মডেলভেদে এদের দামেও রয়েছে পার্থক্য। বেশিরভাগ দোকানে রিচার্জেবল ফ্যানের দাম ১,৯৫০ টাকা থেকে ৬,৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, যেখানে বড় এবং শক্তিশালী মডেলগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। যদিও ভাল ফিচারসহ কিছু উন্নত মডেলের দাম এই রেঞ্জের চেয়েও বেশি হতে পারে, তবুও ভালো মানের কুলিং বিবেচনায় এগুলো খুব বেশী খরচসাপেক্ষও নয়।
বাংলাদেশি কোম্পানি ল্যাক্সফো ইলেকট্রনিক্স প্রতিযোগিতামূলক দামে সবসময়ই ভাল মানের রিচার্জেবল ফ্যান সরবরাহ করে, যেখানে গুণমান এবং সাশ্রয়ী মূল্য একসাথে নিশ্চিত করাটা মূল লক্ষ্য।
রিচার্জেবল ফ্যানের অন্যতম বড় সুবিধা হলো এর পোর্টেবিলিটি বা সহজে বহনযোগ্যতা। প্রচলিত ফ্যানের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ বা তারের প্রয়োজন হয় না। ফলে এটি এমন জায়গায় ব্যবহার করা যায় যেখানে সহজে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না—যেমন বাসার ভেতরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কোন স্থান অথবা বাইরে ক্যাম্পিং ও পিকনিকের সময়। এছাড়াও অনেক রিচার্জেবল ফ্যানে বিল্ট-ইন হ্যান্ডেল বা ক্লিপ থাকে, যার ফলে সহজেই এটি বহন বা যেকোনো স্থানে লাগানো যায়।
যদি আপনি আপনার ইলেকট্রনিক পণ্যের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে রিচার্জেবল ফ্যান হতে পারে একটি দুর্দান্ত বিকল্প। এই ফ্যানগুলো প্রচলিত ফ্যানের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে, ফলে কম গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই অক্সাইড) নির্গত করে। তাছাড়া অনেক রিচার্জেবল ফ্যান বাঁশ বা পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে তৈরি। একটি রিচার্জেবল ফ্যান কিনে আপনি সহজেই আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে পারেন।
অনেক রিচার্জেবল ফ্যান নিঃশব্দে চলার জন্য ডিজাইন করা হয়, যা অফিস বা বেডরুমের মতো নীরব জায়গায় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি আপনার প্রশান্তি বৃদ্ধি করে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করা কিংবা শান্তভাবে ঘুমানোর সুযোগ দেয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের রিচার্জেবল ফ্যান পাওয়া যায়, যেগুলোর প্রতিটিতেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা। যেমন—পোর্টেবল রিচার্জেবল ফ্যান একক ব্যবহারকারীর জন্য আদর্শ এবং সহজে বহনযোগ্য। কিছু রিচার্জেবল ফ্যান এয়ার পিউরিফায়ার হিসেবে ভাল কাজ করতে পারে। আবার কিছু ফ্যানের অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য মিস্টিং ফিচার থাকে। আবার কিছু ফ্যান বড় জায়গার জন্য তৈরি, যেগুলো ফ্লোর বা ওয়ালে লাগানো যায়। আপনার ঠান্ডার চাহিদা যাই হোক না কেন, আপনার জন্য উপযুক্ত একটি রিচার্জেবল ফ্যান বাজারে অবশ্যই আছে।
বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু উচ্চমানের এবং সেরা রিভিউপ্রাপ্ত রিচার্জেবল ফ্যান। নিচে বিভিন্ন ব্রান্ডের কিছু জনপ্রিয় ও আধুনিক মডেল তুলে ধরা হলো:
ল্যাক্সফো ইলেকট্রনিক্স হলো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা রিচার্জেবল ফ্যান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তারা দুটি নির্ভরযোগ্য রিচার্জেবল ফ্যান বাজারে নিয়ে এসেছে—একটি হলো ৬ ইঞ্চি পোর্টেবল মিনি ফ্যান যা ডেস্ক ও ভ্রমণের জন্য আদর্শ, আরেকটি হলো ১৪ ইঞ্চির পাওয়ারফুল টেবিল ফ্যান যা বাসা বা অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। দুটি মডেলেই রয়েছে শক্তিশালী এয়ারফ্লো, দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং স্টাইলিশ ডিজাইন। বাংলাদেশের লোডশেডিং পরিস্থিতিতে ঠান্ডা থাকার জন্য এগুলো খুবই কার্যকর।
ওয়ালটন WRF16L হলো একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য ১৬ ইঞ্চির রিচার্জেবল ফ্যান। এতে রয়েছে ডুয়াল-স্পিড সেটিং এবং ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ। দীর্ঘসময় লোডশেডিং চললেও এটি দীর্ঘসময়ব্যাপী আপনাকে শীতল বাতাস প্রদান করতে পারে। এতে বিল্ট-ইন এলইডি লাইট এবং ওভারচার্জ প্রটেকশন রয়েছে, যা ফ্যানটিকে করেছে আরও নিরাপদ। এর মজবুত গঠন এবং ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা একে অন্যতম জনপ্রিয় মডেল করে তুলেছে।
ভিশন RE-FN 25 মডেলের ফ্যানটি বিখ্যাত মূলত এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবার কারণে। এতে রয়েছে একটি সিলড লং-লাইফ ব্যাটারি, যা ফ্যানটিকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চালাতে সক্ষম। এতে রয়েছে তিনটি স্পিড কন্ট্রোল অপশন, এলইডি নাইট লাইট, এমনকি জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য ইউএসবি পোর্টও। এর সলিড গঠন একে করেছে ডেস্ক বা টেবিলে ব্যবহারের জন্য একদম উপযুক্ত, আর ব্যাটারির কারণে লোডশেডিংয়ের সময়ও ঠান্ডা থাকা যায় নিশ্চিন্তে।
মিয়াকো-এর এই ফ্যানটি স্টাইল এবং পারফরম্যান্সের এক দারুণ সমন্বয়। এর ১২ ইঞ্চির ব্লেড ভালো এয়ারফ্লো দেয়, আর বিল্ট-ইন এলইডি ল্যাম্প বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় আপনাকে আলো সরবরাহ করতে সক্ষম। AC ও DC দুই ধরনের ইনপুট ফিচার থাকার কারণে এটি বাসায় বা ভ্রমণের সময়ও ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে 2-Speed Fan Motor এবং ফুল চার্জে প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।
রিচার্জেবল ফ্যান কেনার সময় ব্যাটারির স্থায়িত্ব (লাইফ) ও চার্জিং টাইম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। একটি ফ্যানের ব্যাটারি যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, আপনি তত বেশি সময় ধরে তা রিচার্জ না করেই ব্যবহার করতে পারবেন। কিছু রিচার্জেবল ফ্যানের ব্যাটারি একবার চার্জে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে!
তবে শুধু ব্যাটারি লাইফ নয়, চার্জিং টাইমও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেনার সময় আপনি এমন একটি ফ্যান বাছাই করবেন যার চার্জিং টাইম কম, যাতে দ্রুত চার্জ দিয়ে প্রয়োজনমতো দ্রুতই আবার ব্যবহার শুরু করা যায়।
রিচার্জেবল ফ্যান কেনার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, যেমন—ফ্যানের আকার, শব্দের মাত্রা এবং স্পিড অপশন। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ছোট ফ্যান উপযুক্ত, কিন্তু বড় জায়গার জন্য বড় আকারের ফ্যান প্রয়োজন হয়। আপনি যে উদ্দেশ্যে ফ্যানটি ব্যবহার করবেন, তার উপযোগী সাইজের ফ্যান বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্যানের শব্দের মাত্রাও বিবেচ্য—বিশেষ করে যদি আপনি অফিস, স্টাডি রুম বা বেডরুমে ব্যবহার করতে চান। অতিরিক্ত শব্দ করলে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সাইলেন্ট অপশনসহ মডেল নির্বাচন করুন।
আর সর্বশেষ কথা, ফ্যানের স্পিড অপশনগুলোর দিকেও খেয়াল রাখুন। ফ্যানের স্পিড কন্ট্রোল করার সুযোগ কতটুকু, ডানে বামে ফ্যানটা কত ডিগ্রী পর্যন্ত ঘুরতে পারে, সে ব্যাপারগুলোও বিবেচনায় রাখুন।
রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু বিদ্যুৎ বিল কমানোই নয়, বরং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ফ্যানের স্থায়িত্বও অনেক বাড়ানো যায়। নিচে কিছু বাস্তবসম্মত টিপস দেওয়া হলোঃ
রাত কিংবা খুব ভোরের দিকে বিদ্যুতের রেট তুলনামূলক কম থাকে। এই সময় ফ্যান চার্জ করলে ইউনিট প্রতি খরচ কমে যায় এবং গ্রিডের উপর চাপও কম পড়ে।
আপনার যদি সোলার সেটআপ থাকে (ছোট হলেও চলবে), তাহলে তা ব্যবহার করে ফ্যান চার্জ করুন। এতে একপ্রকার বিনামূল্যে ফ্যান চালানো হয়, যা গ্রামে বা লোডশেডিংপ্রবণ এলাকায় বিশেষভাবে খুব কার্যকরী।
কম ওয়াট ও অধিক ব্যাটারী ক্যাপাসিটির মডেল বেছে নিন। এনার্জি-এফিশিয়েন্ট ফ্যানগুলো কম বিদ্যুৎ খরচে দীর্ঘ সময় চলে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
চার্জ ফুল হয়ে গেলে ফ্যানটি আনপ্লাগ করুন। অতিরিক্ত চার্জ ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয় এবং বিদ্যুৎ অপচয় করে। অটো কাট-অফ বা ওভারচার্জ প্রটেকশনসহ মডেল বেছে নিলে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা আরও বাড়ে।
ফ্যান সবসময় হাই স্পিডে চালানোর প্রয়োজন নেই। মিডিয়াম বা লো স্পিডে চালালে ব্যাটারির চার্জ কম খরচ হয় এবং ঘন ঘন চার্জ করার প্রয়োজন কমে যায়।
ধুলো জমলে ফ্যানের ব্লেডকে ঘোরাতে মোটরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, যার ফলে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। তাই নিয়মিত ব্লেড ও এয়ার ভেন্ট পরিষ্কার রাখুন যেন বাতাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে।
ফ্যানটিকে জানালার পাশে বা ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখলে প্রাকৃতিক ঠান্ডা হাওয়া পাওয়া যায়। এতে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে দিয়েও আরামদায়ক বাতাস পাওয়া সম্ভব।
দিনের বেলায় পর্দা টেনে রাখলে বা জানালা বন্ধ রাখলে রুমের তাপমাত্রা কমে। ফলে ফ্যানকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় না, যা ব্যাটারি সাশ্রয়ে সহায়ক।
রিচার্জেবল ফ্যান সাধারণত ছোট বা বন্ধ ঘরে বেশি কার্যকর। খোলা বা বড় জায়গায় ব্যবহার করলে বাতাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কার্যকারিতা কমে যায়।
অনেকেই ফ্যান অন রেখেই রুম ছেড়ে চলে যান। এমনটি করা উচিত নয়। এমনকি ব্যাটারি মোডে থাকলেও ব্যবহার না করলে ফ্যান বন্ধ করে দিন। এতে চার্জ সাশ্রয় হয় এবং ফ্যানের আয়ু বাড়ে।
ফ্যান ব্যবহারের এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে আপনি শুধু মাসিক বিদ্যুৎ বিলই কমাতে পারবেন না, বরং আপনার রিচার্জেবল ফ্যানটিও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এতে এটি আপনার বাসা বা অফিসের জন্য আরও মূল্যবান একটি বিনিয়োগে পরিণত হবে।
যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতোই, আপনার রিচার্জেবল ফ্যানকে ঠিকভাবে কাজ করাতে হলে কিছু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্ন প্রয়োজন। ফ্যানের ব্লেডে ধুলাবালি জমে গেলে এর কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, তাই ব্লেডগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন যেন বাতাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে।
এছাড়া, ব্যাটারিকে সঠিকভাবে চার্জ না দিলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। তাই সময়মতো ব্যাটারি চার্জ দিন এবং একে বেশি সময় ধরে খালি বা ফুল চার্জ অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। যদি আপনি ফ্যানটি বাইরে ব্যবহার করেন, তাহলে সরাসরি রোদে রাখবেন না। এতে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফ্যানের আয়ু কমে যেতে পারে।
এই সাধারণ যত্নগুলো অনুসরণ করলে আপনার রিচার্জেবল ফ্যান দীর্ঘ সময় ভালোভাবে চলবে এবং আপনাকে নিরবচ্ছিন্ন ঠান্ডা হাওয়া দিতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং বিকল্প ব্যাকআপ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, সেখানে রিচার্জেবল ফ্যান একটি সাশ্রয়ী বিনিয়োগ। এটি শুধু বিদ্যুৎ বিল কমায় না, বরং লোডশেডিং চলাকালীন আপনাকে স্বস্তিতে রাখে, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমায়, এবং এদের মোটামুটি সবগুলোই বিভিন্ন মডেলে বাজারে রয়েছে যা একেবারেই সহজলভ্য।
আপনি যদি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি মিনি রিচার্জেবল ফ্যান খুঁজে থাকেন কিংবা পরিবারের জন্য চান একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান, বাজারে রয়েছে প্রচুর কালেকশন।
তাই যখনই বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসে, একবার বাংলাদেশে রিচার্জেবল ফ্যানের দাম দেখে নিতে ভুলবেন না। আমরা নিশ্চিত, আপনি এমন একটি অপশন আপনার জন্য অবশ্যই পেয়ে যাবেন, যা কিনা একইসাথে দাম ও বিদ্যুৎ উভয় দিক থেকেই সাশ্রয়ী।
সাশ্রয়ের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার ব্যবহারের ধরণ ও চার্জিং সময়ের উপর। তবে প্রচলিত ফ্যানের তুলনায় আপনি যদি এনার্জি-এফিশিয়েন্ট সেটিং ব্যবহার করেন এবং অফ-পিক আওয়ারে নিয়মিত চার্জ করেন, তাহলে বিদ্যুৎ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
ব্যক্তিগত ব্যবহার বা সীমিত জায়গার ক্ষেত্রে রিচার্জেবল ফ্যান মেইন কুলিং সিস্টেম হিসেবে কার্যকর হতে পারে। তবে বড় জায়গার ক্ষেত্রে এটি অন্যান্য কুলিং সিস্টেমের সাথে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করাই উত্তম।
অফ-পিক আওয়ারে বিদ্যুতের রেট কম থাকে, ফলে সেই সময় চার্জ দিলে প্রতি ইউনিট খরচও কম হয়। এতে মোট বিদ্যুৎ খরচ কমে যায় এবং ফ্যানটি চালানো হয় আরও সাশ্রয়ী, অথচ কুলিং বা আরামের কোনো ঘাটতি হয় না।
হ্যাঁ, রিচার্জেবল ফ্যানের শক্তি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু ফিচার বড় ভূমিকা রাখে—যেমন ব্রাশলেস মোটর, এনার্জি সেভিং মোড এবং মাল্টি-স্পিড অপশন। এসব ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারী কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও ভাল কুলিং পেতে পারেন, যা খরচ কমায়।
প্রতিটি মডেলের ব্যাটারি লাইফ ভিন্ন হলেও, বেশিরভাগ রিচার্জেবল ফ্যান একবার চার্জে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত চলে। নিয়মিত চার্জ লেভেল মনিটরিং ও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ব্যাটারির আয়ু আরও দীর্ঘ হয় এবং কার্যকারিতাও বজায় থাকে।